জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন ? যারা উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করে তারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য Joint এর প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাস অনুযায়ী Joint পরীক্ষা নেওয়া হয়। তারপরও আলাদা ভাবে Joint এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। উচ্চমাধ্যমিকের জন্য প্রশ্ন অধ্যায় অনুযায়ী ভাগ করা থাকে। তাই বিস্তারিত না পড়েই অনেক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে থাকে। কিন্তু জয়েন্টের ক্ষেত্রে সিলবাসের কোথা থেকে প্রশ্ন হবে সেটা বলা সম্ভব নয়। সিলেবাসের তুলনায় প্রশ্ন কম হওয়ার কারণে সব সব জায়গা থেকে প্রশ্ন আসেনা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জয়েন্টের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হবে ?
Joint entrance exam |
Joint এর প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন – কিভাবে জয়েন্টের প্রস্তুতি নিতে হবে ?
আগেই বলেছি Syllabus এর ব্যাপকতার তুলনায় প্রশ্নের সংখ্যা বেশ কম । তাই প্রতিটি অংশ থেকে প্রশ্ন নাও থাকতে পারে। কোন্ অংশ থেকে প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে আন্দাজ করা শক্ত। কাজেই প্রস্তুতি নিতে হবে পুরো সিলেবাস ধরে। এই প্রস্তুতি পর্বে যাতে কোন ফাঁক না থাকে সেই জন্য রইল কয়েকটি জরুরি টিপস্। জয়েন্টের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
পদার্থবিদ্যা ( Physics ) এর জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ ?
ফিজিক্স এর তিন ধরনের প্রশ্ন হতে পারে। 1. Theory Based ঞ্জানমূলক প্রশ্ন। থিওরি জানা থাকলেই উত্তর দেওয়া সম্ভব। 2. Logic Based ব্যাখামূলক প্রশ্ন এর উত্তর লিখতে গেলে থিওরির প্রয়োগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। 3. Numerical ability based প্রশ্ন। এর জন্য দরকার গাণিতিক দক্ষতা। এক এবং দুই এর ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা উতরে গেলেও ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়ে তিন নম্বর অর্থাৎ নিউমেরিক্যাল এবিলিটি বেসড প্রশ্নের ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার। প্রশ্নের তুলনায় সময় অনেক কম থাকে তাই Reading ability অর্থাৎ প্রশ্ন পড়ার স্পিড বাড়াতে হবে। না হলে সময়ের অভাবে জানা প্রশ্নও ছেড়ে আসতে হতে পারে।
উচ্চমাধ্যমিকের নতুন সিলেবাসের নম্বরের ওয়েটেজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। একাদশ শ্রেণির সিলেবাসের যেসব অংশ জয়েন্টের সিলেবাসে আছে সেইসব অংশের উপর আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো করে এইসব বিষয়গুলি রপ্ত করতে হবে 1. ভেক্টরের গুণ 2. মেকানিক্স-এ বল এবং ঘর্ষন সংক্রান্ত প্রশ্নাবলি 3. মুক্ত বস্তু চিত্র 4. আবর্ত গতিবিদ্যায় অপকেন্দ্র বল ও কৌণিক ভরবেগ সংক্রান্ত প্রশ্ন 5. উদস্থিতি বিদ্যা 6. প্রবাহী বলবিদ্যা 7. তাপ গতি বিদ্যা 8. বিকিরণ 9. আলোক-দর্পণ ও লেন্সের গাণিতিক প্রশ্নাবলি 10. তড়িৎ এ Kirchhoff এর সুত্রাবলির গাণিতিক প্রয়োগ।
দ্বাদশ শ্রেণীর অংশ থেকে আলাদা করে নজর দিতে হবে এই সব বিষয়ে 1. তরঙ্গের উপরিপাতন তত্ত্ব এবং গাণিতিক প্রয়োগ 2. স্থির তড়িৎ এর গাউস এর সুত্র, তড়িৎ চুম্বকত্বে এম্পিয়ারের গতিপথ সুত্র, গ্যালভ্যানোমিটার 3. মডার্ন ফিজিক্স এ বোরস্ এটোমিক মডেল, রেডিও-এক্টিভিটি, বাইনারি নম্বর, লজিক গেট, p-n জাংশন ডায়োড, ট্রানজিস্টর। তাই এরিথমেটিক্যাল এবিলিটি বাড়াতে হবে। আন্দাজে উত্তর দিওনা । কঠিন প্রশ্নের জন্য বেশি সময় না দিয়ে সহজ প্রশ্ন চলে যাও। মডেল টেস্ট পেপার practice করতে হবে। এতে অনেক প্রস্তুতি ভালো হবে।
রসায়ন ( Chemistry ) এর প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হবে ?
কেমিস্ট্রি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় সিলেবাসে অংশ অনুযায়ী নম্বর ভাগ করা আছে। এই ক্ষেত্রে সব অধ্যায় না পড়লেও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু জয়েন্টে এমন করলে হবে না। জয়েন্টের জন্য পুরো সিলেবাস পড়তে হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে যা পড়াশোনা হয়েছে সে তুলনায় আরও পড়াশোনা বেশি করতে হবে। পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতে হবে। ভালো রেজাল্টের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস্ দেওয়া হল এখানে।
প্রস্তুতির কথায় প্রথমে বলতে হয় , সিলেবাসের ফিজিক্যাল অংশে জোর দিতে হবে থিওরির উপর। কনসেপ্ট clear না থাকলে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এটোমিক স্ট্রাকচার, কোয়ান্টাম নাম্বার, রেডিও-এক্টিভিটি, পিরিয়ডিক টেবল, কেমিক্যাল বন্ডিং ও মলিকিউলার স্ট্রাকচার, কেমিক্যাল এনার্জেটিক্স, কেমিক্যাল ডায়নামিক্স, আয়োনিক ও রেডক্স ইকুইলিব্রিয়া, ইলেক্ট্রোলাইটিক সলিউশন সংক্রান্ত ধারণা থাকা দরকার। তা নাহলে সমস্যা হতে পারে।
অর্গানিক কেমিস্ট্রি অংশে ত্রিমাত্রিক সমবায়তা এবং ইলেকট্রনিক এফেক্টস্ এর উপর দখল থাকা দরকার। এনভায়রনমেন্টাল কেমিস্ট্রি, বায়ো-মলিকিউলস্, এপ্লিকেশন ওরিয়েন্টেড কেমিস্ট্রিতে ফিজিক্যাল প্রিন্সিপাল এর উপর ভিত্তি করে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন আসবে।
সবশেষে বলা দরকার, সময়ের গুরুত্ব মাথায় রেখে প্রশ্ন তাড়াতাড়ি পড়ে প্রতি প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কোন প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে সেই প্রশ্নের জন্য সময় নষ্ট না করে অন্য প্রশ্নে চলে যাওয়া উচিৎ। এরপর যেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি সে সম্পর্কে ভালো করে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিষয় হিসেবে রসায়নকে গুরুত্ব দিয়ে সিলেবাসের পুরোটা খুঁটিয়ে পড়তে হবে।
অঙ্ক ( Mathematics ) এর প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন ?
অঙ্কের ক্ষেত্রেও পুরো সিলেবাস থেকেই প্রশ্ন হয়ে থাকে তাই পুরো সিলেবাস খুঁটিয়ে পড়তে হবে। প্রস্তুতি যদি হয় মডিউল বেসড্ তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। সাজেশন ভিত্তিক পড়াশোনা করে কোন লাভ হবেনা। পরীক্ষায় সফল হওয়ার কিছু টিপস্ দেওয়া হল।
প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁকি দেওয়া চলবেনা । সিলেবাসের সবকটি বিষয় সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। প্রতিটি অধ্যায়ের ফান্ডামেন্টাল কনসেপ্ট আগে ক্লিয়ার করতে হবে। তার কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে দেখতে হবে। প্রশ্নের সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু সময় কম। একটি প্রশ্ন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে অর্ধেক calculation করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ মেন্টাল ম্যাথে দুর্দান্ত হতে হবে।
অতিরিক্ত Calculator নির্ভর মানুষের গণনা শক্তি কমিয়ে দেয়। মেন্টাল ম্যাথে দুর্দান্ত হলে ৮০% প্রশ্নের উত্তর করা কোন সমস্যায় নয়। এতে মধ্য মেধার ছাত্রছাত্রীরা খুব বেশি হলে 50% নম্বরের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। আন্দাজে উত্তর দেওয়ার খারাপ অভ্যাস ছাড়তে হবে।
চার পাঁচটি বই না পড়ে একটি Standard বই পড়তে হবে। এর অনুশীলনী বারবার অভ্যাস করতে হবে। এতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। টেক্সট বই পড়ার পাশাপাশি যেসব মডেল প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় সেগুলো Practice করতে হবে। শুধু অঙ্ক কষা নয় নিয়ে ভাবাও Practice করতে হবে। একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের পাশাপাশি কয়েকটি ভুল উত্তরও রাখা যেতে পারে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
পরীক্ষার হলে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার্থী তিন ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হয়। 1. কয়েকটি অঙ্ক পরিচিত 2. কয়েকটি অল্প চেষ্টা করলেই হয়ে যেতে পারে 3. কয়েকটি অঙ্কের জন্য বাড়তি বুদ্ধির দরকার। 1 নম্বর অবস্থার জন্য সঠিক উত্তর আন্দাজেই বোঝা যায়। তবু অল্প কিছু Calculation করে নিশ্চিত হতে হবে। 2 নম্বর অবস্থার ক্ষেত্রে রাফে কয়েকটি স্টেপ জাম্প করে অঙ্কটি কষে সঠিক উত্তর করতে হবে। 3 নম্বর অবস্থার ক্ষেত্রে কয়েকবার বুদ্ধি খাটিয়ে চেষ্টা করে সমাধান না হলে ছেড়ে দিতে হবে। সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
কলনবিদ্যার বা ক্যালকুলাস ভালো করে প্রাকটিস করতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের সচেতনতা ও চর্চা বাড়াও। এক্ষেত্রে MCQ এর বই থেকে সমাধান করলে উপকার পাওয়া যাবে। প্রয়োগমূলক কলনবিদ্য বেশি চর্চা করতে হবে।
জীববিদ্যা ( Biology ) এর প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন ?
জীববিদ্যা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ডাক্তার পড়ার জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সুবিধা হবে। বিষয়ের ওপর গভীর দখল থাকতে হবে। প্রতিটি অধ্যায় মন দিয়ে খুটিনাটি পড়তে হবে। আন্দাজে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। উত্তর সঠিক কিনা , সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলে সেটি ছেড়ে দিতে হবে।
প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর সব প্রশ্ন পড়ে সময় নষ্ট না করে সহজ ও জানা প্রশ্ন আগে করতে হবে। তারপর কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। দু তিনটি HB পেন্সিল ও একটি ইরেজার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। পরীক্ষার একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন হাতে 15 মিনিট থাকবে তখন থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় ফাকা ভরাট করবেন।
সব অধ্যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও একাদশ শ্রেণীর অংশ থেকে কোষের গঠন, ক্রোমোজোমের গঠন, জিনতত্ব, জৈব বৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। দ্বাদশ শ্রেণীর অংশ শারীরবিদ্যার সম্পূর্ণ অংশ, প্রয়োগমূলক জীববিদ্যা, অর্থনৈতিক প্রাণীবিদ্যা, বায়োমলিকিউলাস ও ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে।
বাংলা মাধ্যমের বইয়ের পাশাপাশি সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য প্রকাশিত Objective Biology এর বই পড়তে হবে এবং প্রতিটি অধ্যায় ধরে মডেল প্রশ্ন ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। অর্থনৈতিক প্রাণীবিদ্যা সম্পর্কে বিশদ জানার জন্য স্নাতক স্তরের বই এর সাহায্য নিতে হবে। মডেল প্রশ্নপত্র বারবার অনুশীলন করে নিখুঁত উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
পরিশেষে:
আজকের আর্টিকেলটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এর জয়েন্টের প্রস্তুতির জন্য কিছু টিপস্ দেওয়া হল। এই পরামর্শ নিয়ে প্রস্তুতি নিলে আশা করা যায় ফল ভাল হবে।
আজকের পোস্টটি কেমন হয়েছে জানাবেন। আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে লাগবে। ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ